টাটকা চালের হাতে বানানো গরম-গরম পিঠাপুলি। পিঠার সেই ম-ম গন্ধ বাংলার আকাশে বাতাসে ছড়াতে শুরু করে অগ্রহায়ণের শেষ ভাগ থেকেই। রীতি অনুযায়ী গোলায় ধান তোলার পর কৃষকের ঘরে এই উৎসব জানান দেয় বাঙালিয়ানার।
তবে সে সব আজ ইতিহাস ই বটে। শহরের ছেলে-মেয়েদের কাছে আজ তা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় বা শিল্প-সাহিত্যেই পড়া এক ঐতিহ্য। তবে এর ব্যতিক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী কাজী জুঁই। ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তিনি।
বাঙালীর লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। এমনই একটি খাবার হচ্ছে নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী ‘নকশী পিঠা’। দেখতে যেমন চমৎকার খেতেও তার চেয়ে বেশি সুস্বাদু।
নরসিংদীর এই ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার ‘নকশী পিঠা’ নিয়ে কাজ করছেন কাজী জুঁই। পিঠা নিয়ে কাজ করার আইডিয়া কোত্থেকে পেলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করোনার প্রদুর্ভারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতেই অলস সময় পার করছিলাম। তবে অলস বসে না থেকে বন্ধের এই সময়টাকে নিজের ইচ্ছে পূরণের সময় হিসেবে বেছে নিলাম। স্টাডি শুরু করলাম অনলাইন ব্যবসা নিয়ে। বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে যেহেতু পিঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ তাই মূলত পিঠাকে বেছে নেয়া।
শহরকেন্দ্রীক জীবনে আমাদের অনেকের ইচ্ছে থাকলেও হয়তো আমরা পিঠা বানাতে পারিনা। অনেক ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই, আবার সময়ও নেই। সে সব মানুষদের কাছে পৌঁছানোও আমার একটি উদ্দেশ্য। বলতে পারেন, গ্রামীণ এই ঐতিহ্যকে সবার মাঝে বাচিয়ে রাখা ও স্বাদ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার ই একটি ছোট্ট প্রয়াস ‘নকশী নীড়’।
তিনি জানান, মাত্র ৭০০ টাকার পুঁজি নিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘নকশী নীড়’ নামক ফেসবুক পেজ খুলার মধ্য দিয়ে আমার ব্যবসা শুরু। সেখান থেকে ভাল সাড়া পাওয়ায় ‘আলাদ্দিনের প্রদীপ’ নামক একটি ইকমার্স প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হয়। আলহামদুলিল্লাহ, আস্তে আস্তে অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি।
বর্তমানে কি কি রকম পিঠা বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এখন আমি নরসিংদীর নিজস্ব কিছু পিঠা নিয়ে কাজ করছি। তার মধ্যে আছে, জামাই পিঠা, বউ পিঠা (আমার উদ্ভাবন), ঝিনুক, গোলাপ পিঠা, ফুলঝুরি, বাসন্তী, মুগ পাকন, পাকন, বিস্কুট পিঠা, চ্যাপা শুটকির বড়া (এটা কোন পিঠা না) ইত্যাদি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে হিসেবে জুঁই জানান, নকশী নীড়কে অনেক বড় করতে চাই। ঐতিহ্যবাহী নকশী পিঠার একটা বিশ্বাসযোগ্য আশ্রয়স্থলে পরিণত করতে চাই। দেশের এই ঐতিহ্যকে দেশসহ দেশের বাহিরেও ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করব।
ব্যবসায় নেমে বাঁধা নয়, বরং সবার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। তার মতে, শুরু থেকে পরিবারের সকল সদস্য আমাকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। মা-বাবা, ভাইসহ বাড়ির পিচ্চিটা পর্যন্ত এই ব্যবসা নিয়ে সমান এক্সাইটেড।
মন্তব্য করুন